বিশ্ব বাংলা সাহিত্য সমাবেশ, ২০১৯-এর ষষ্ঠ ফোন আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় গত আট (০৮) এপ্রিল (April) , ২০১৯ রোববার, নিউইয়র্ক সময় সন্ধ্যা সাতটায়। দু’ঘণ্টা ধরে চলা আলোচনায় অংশ নেন ডেনভার থেকে জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ও পূরবী বসু, আটলাণ্টা থেকে হারুন রশিদ, আশফাক স্বপন, রুদ্র শংকর, শুভংকর নাথ, হৃদয় আহমেদ, ফিরোজ আহমেদ ও সুমন আরশাদ, ভার্জিনিয়া থেকে আনোয়ার ইকবাল, নর্থ ক্যারোলাইনা থেকে ধনঞ্জয় সাহা, মন্ট্রিয়ল থেকে নাহার মনিকা ও রাকীব হাসান, টোরান্টো থেকে সাদ কামালী, টেনেসী থেকে হুমায়ুন কবির, শিকাগো থেকে খায়রুল আনাম, ফিলাডেলফিয়া থেকে বদরুজ্জামান আলমগীর ও আলী সিদ্দীকি, ফ্লোরিডা থেকে শাহাব আহমেদ, হাসানুজ্জামান ও সেজান মাহমুদ এবং ক্যালিফোর্নিয়া থেকে মোহাম্মদ ইরফান। সবাইকে স্বাগত জানিয়ে সভা শুরু করেন বিশ্ব সাহিত্য সমাবেশের আহ্বায়ক সাহিত্যিক জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত। সভার প্রথম অংশে সমাবেশ প্রস্তুতিতে গঠিত বিভিন্ন পরিষদের সমন্বয়কগণ নিজ নিজ পরিষদের কাজকর্মের অগ্রগতির বিষয়ে সবাইকে অবহিত করেন। দ্বিতীয় অংশে গুরুত্বের ক্রম অনুসারে প্রস্তুতি
সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন সকলে মিলে। আলোচনার সার ও সিদ্ধান্তগুলো নীচে তুলে ধরা হল।
তহবিল সংগ্রহঃ
গত সভা ও এই সভার মাঝে তহবিল সংগ্রহে বেশ খানিকটা অগ্রগতি হয়েছে। সমাবেশের সার্বিক সমন্বয় পরিষদের পক্ষ থেকে শাহাব আহমেদ জানান পঁচিশ হাজার ডলারের সমাবেশ বাজেটের মধ্যে প্রায় সতের হাজার ডলার ইতঃমধ্যে তহবিলে জমা পড়েছে বা প্রতিশ্রুত হয়েছে। এই টাকার অধিকাংশই সমাবেশের সংগঠকদের চাঁদা ও অনুদান। সভায় উপস্থিত সংগঠকদের মধ্যে অনেকেই নূতন প্রতিশ্রতি প্রদান করেন বা পূর্বে প্রতিশ্রুত
পরিমাণ বর্ধিত করেন। এছাড়াও প্রকাশিতব্য স্মারক গ্রন্থে বিজ্ঞাপন সংগ্রহের ব্যাপারটি সভায় আলোচিত হয়। এলক্ষ্যে আশফাক স্বপন একটি প্রচারণা-পুস্তিকা তৈরী করছেন বলে সভা অবহিত হয়। বিজ্ঞাপন সংগ্রহে সবার সক্রিয় সহযোগীতা প্রার্থনা করা হয় সভায়। উল্লেখ্য সংগঠনের যাত্রাপথ নিশ্চিত করার জন্য, পরবর্তী কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার জন্য সমাবেশ উপলক্ষ
করে বড় মাপের একটি তহবিল (প্রাক্কলিত বাজেটের দ্বিগুণ পরিমাণ) সংগ্রহ না করা গেলে এই সংগঠনের কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া দুরূহ হবে ভবিষ্যতে।
প্রচারণাঃ
প্রচার পরিষদের পক্ষ থেকে সমাবেশের প্রচারণায় নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানান আনওয়ার ইকবাল ও মোহাম্মদ ইরফান। এসবের মধ্যে আছে – ফ্লায়ার, লোগো, ব্যানার ডিজাইন, ওয়েবসাইটের প্রস্তুতি, বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি, ফেসবুকে পোস্টিং ইত্যাদি। পূরবী বসু প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিটি হারুন রশিদের উদ্যোগে প্রথম আলোর নিউইয়র্ক সংবাদদাতার কাছে পাঠানো হলে প্রথম আলোর উত্তর আমেরিকা শাখায় সেটি ছাপানো হয় –
https://www.prothomalo.com/northamerica/article/1587392/আটলান্টায়-বিশ্ব-বাংলা-সাহিত্য-সমাবেশ- শুরু-৩১-আগস্ট প্রচারের কাজে উল্লেখযোগ্য একটি অগ্রগতি হচ্ছে – “অপার বাংলা” নামে আটলাণ্টা থেকে প্রকাশিত সাহিত্য বিষয়ক পোয়াবার্ষিক অনলাইন পত্রিকার সাথে উত্তর আমেরিকা বাংলা সাহিত্য পরিষদের সহযোগিতামূলক কার্যক্রমের সূচনা। আটলান্টার আই,টি পেশাজীবি, উদ্যোক্তা, লেখক শুভংকর নাথের নেতৃত্বে পরিচালিত এই মেঘম্যাগকে এন,এ,বি,এল,এসের সাথে যুক্ত করার প্রস্তাব নিয়ে শাহাব আহমেদের কাছে আসেন আটলাণ্টার রুদ্র শংকর ও হারুন রশিদ। এই প্রস্তাবের ভিত্তিতে সহযোগীতার একটি কাঠামো দাঁড় করান শাহাব আহমেদ, পূরবী বসু, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ও হুমায়ুন কবীর। “অপার বাংলা”-র সম্পাদনা পরিষদে যুক্ত হন পূরবী বসু (অন্যতম কার্যনির্বাহী সম্পাদক হিসেবে), এছাড়াও শাহাব আহমেদ ও হুমায়ুন কবীরকে সম্পাদনা পরিষদে এবং জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, আনওয়ার ইকবাল ও এই বিবরণী প্রস্তুতকারীকে উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আটলাণ্টার সেবা লাইব্রেরীতে ঢাকা-কলকাতাসহ বিশ্বব্যাপ্তির যে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে “অপার বাংলা” এপ্রিলের শুরুতে মেঘবাহনে তাতে শামিল হন এন,এ,বি,এল,এসের সংশ্লিষ্ট সকলে। সবার বক্তব্যে বিশ্বমানের একটি বাংলা সাহিত্য পত্রিকা গড়ে তোলার অঙ্গীকার ও সেই প্রয়াসে সহযোগীতার সুরটি স্পষ্ট ফুটে ওঠে। অপার বাংলার ওয়েবসাইটে (https://aparbangla.net/ ) ইতঃমধ্যে বিশ্ব বাংলা সাহিত্য সমাবেশের খবর বেরিয়েছে। সভায় উপস্থিত অপার বাংলার প্রধান সম্পাদক শুভ জানান, তিনি সমাবেশের জন্য একটি ওয়েবসাইট ও ফেসবুক ইভেণ্ট পেজ তৈরী করে দেবেন অচিরেই। এই কাজ তিনি ইতঃমধ্যে শুরু করেছেন। এছাড়াও প্রচারণার জন্য প্রয়োজনীয় লোগো ও শ্লোগান তৈরীর কাজ এগিয়েছে বেশ খানিকটা। সংগঠন ও সমাবেশ লোগো ডিজাইন করেছেন তাজুল ইমাম। সমাবেশের জন্য আনওয়ার ইকবালও একটি লোগো ডিজাইন করেছেন। এছাড়াও পশ্চাৎপট হিসেবে ব্যবহারের জন্য একটি নকশা তৈরী করে দিয়েছেন ডেনভারের তামজিদা
পিউ। আনওয়ার ইকবাল ইতঃপূর্বে একটি সমাবেশবুলির (শ্লোগান) প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন। শ্লোগান তৈরীর লক্ষ্যে পূরবী বসুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইতঃমধ্যে বেশ কটি শ্লোগান জমা পড়েছে।
সংকলন ও প্রকাশনাঃ
জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ও হুমায়ুন কবীর সংকলন ও স্মরণিকা প্রকাশের উদ্দেশ্য গৃহীতব্য পদক্ষেপগুলো সভাকে জানান। সংকলনের জন্য একটি সুন্দর নামের কথা ভাবতে সবাইকে আহ্বান জানানো হয়। সংকলনে প্রকাশিতব্য লেখা সংগ্রহের জন্য উন্মুক্ত আহ্বান এমূহুর্তে বাস্তবসম্মত নয় বলে সভায় মতামত ব্যক্ত করা হয়। জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ও পূরবী বসু একটি লেখক তালিকা তৈরীর মাধ্যমে লেখা চেয়ে নেবেন সুপ্রকাশিত লেখকদের কাছ থেকে। এব্যাপারে যেকোন ধরনের যোগাযোগের দরকার হলে তাঁদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য
সবাইকে আহ্বান জানানো যাচ্ছে। সংকলন সম্পাদনার ব্যাপারে জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ও হুমায়ুন কবীরের সাথে প্রকাশনা পরিষদের অন্যরাও কাজ করবেন। স্মরণিকার জন্য বিজ্ঞাপন সংগ্রহের জন্য সবাইকে আহ্বান করা হলেও বিজ্ঞাপনের হার নিয়ে এসভায় নূতন করে কোন আলাপ হয়নি। এছাড়াও ইতঃপূর্বের একটি আলোচনায় স্মরণিকা প্রকাশের দায়িত্ব স্বাগতিক
পরিষদকে দেয়া হলেও এই সভায় এটি চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত করে দেয়া হয়নি। (বিজ্ঞাপন সংগ্রহের জন্য আশফাক স্বপনের করা প্রচারণা-পুস্তিকার কথা আগে বলা হয়েছে। আশফাক স্বপন চূড়ান্ত ভার্শন তৈরীর পর এটি সংগ্রহ করা যাবে আশফাক স্বপন, পূরবী বসু বা মোহাম্মদ ইরফানের কাছ থেকে। পুস্তিকা/কিটের দুটো সংস্করণ থাকবে – একটি দেশী স্পন্সরদের জন্য, একটি এখানকার জন্য)।
স্বাগতিক পরিষদের প্রস্তুতিঃ
স্বাগতিক পরিষদের পক্ষ থেকে হারুন রশিদ জানান, সমাবেশের জন্য ভেন্যু হিসেবে একটি হাইস্কুল (বার্কমার হাই স্কুল; https://www.gcpsk12.org/BerkmarHS) নির্ধারিত হয়েছে। এছাড়া একটি হোটেলও সমাবেশ- হোটেল হিসেবে প্রাথমিকভাবে নির্ধারিত হয়েছে। হোটেলের জন্য প্রি-বুক করা রুমের সংখ্যা বাড়িয়ে ত্রিশ থেকে পঞ্চাশে উন্নীত করার জন্য সভায় বলা হয়।
হোটেল ওয়েবসাইটঃ
https://www.wyndhamhotels.com/wingate/atlanta-duluth-georgia/wingate-by-wyndham-atlanta-
duluth/overview?CID=LC:WG::GGL:RIO:National:07932&iata=00065402
অনুষ্ঠানসূচীঃ
পূরবী বসু জানান, আটটি সেমিনারসহ নানা আয়োজনের অনুষ্ঠানসূচী প্রণয়নের কাজ চলছে। এব্যাপারে কারো কোন মতামত, পরামর্শ, উৎসাহ থাকলে পূরবী বসুর সাথে যোগাযোগ করুন। এছাড়াও স্বাগতিক পরিষদের হারুন রশিদ জানান সন্ধ্যায় মঞ্চানুষ্ঠানের আয়োজন থাকছে। এব্যাপারে সমাবেশের অনুষ্ঠান পরিকল্পনা পরিষদ ও স্বাগতিক পরিষদ সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে যতদূর সম্ভব আটলাণ্টা ও অতিথি অংশগ্রহণকারীদের সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবেন।
অংশগ্রহণকারী ও আমন্ত্রণঃ
উন্মুক্ত আলোচনা পর্বের এক পর্যায়ে সম্মেলনে উত্তর আমেরিকা ও অন্যান্য দেশের দেশান্তরী সাহিত্যিক ও সাহিত্যোৎসাহী ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতি বাড়ানো নিয়ে আলাপ হয়। এব্যাপারে নিজ উদ্যোগে আপনার পরিচিত সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারীর সাথে আলাপ করে তাদের সমাবেশের খবরাখবর জানানোর জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হয়। প্রয়োজনে সুপরিচিত উদ্যোক্তাদের স্বকণ্ঠে সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারীদের কাছে আমন্ত্রণ পৌঁছে দেয়া যেতে পারে। এছাড়াও সাহিত্য সমাবেশ অংশে অংশ নেয়ার জন্য বিশ ডলার নিবন্ধন ফি
নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই নিবন্ধন ফি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নেয়া যেতে পারে।
যোগাযোগের ঠিকানাঃ
বদরুজ্জামান আলমগীর ও আলী সিদ্দিকীর অনুরোধ অনুযায়ী সমাবেশ ও সংগঠনের উদ্দেশ্য, কার্যক্রম এবং সবার সাথে সবার যোগাযোগের ঠিকানা ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠানো হবে বলে জানান জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ও পূরবী বসু।
বইমেলাঃ
এই সমাবেশ নিতান্তই একটি সাহিত্য সমাবেশ এবং এতে বইমেলা বা অন্য কোন ধরনের মেলার আয়োজন বা আবহ থাকবে না বলে সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে অংশগ্রহণকারী লেখকগণ নিজেদের বই স্ব-উদ্যোগে প্রচারের ব্যবস্থা করতে পারেন।